দক্ষিণ থাইল্যান্ডে মুসলিম গণহত্যার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা
দুই দশক আগে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে মুসলিম বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তিনি এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য দায় স্বীকার করে ক্ষমা চান।
২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি নারাথিওয়াত প্রদেশের তাক বাই শহরে এক বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যাতে সাতজন নিহত হন। পরে ৭৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর ট্রাকে পিছনে বেঁধে মুখ নিচের দিকে করে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়।
শ্বাসরোধের কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনাটি ইতিহাসে ‘তাক বাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত।
প্রায় চার মাস আগে হত্যার অভিযোগ থেকে সাত সন্দেহভাজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ঘটনার আইনি সীমাবদ্ধতার মেয়াদও শেষ হয়। এরপরই এই প্রথমবারের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসমক্ষে দুঃখ প্রকাশ করলেন।থাকসিনের প্রকাশ্য ক্ষমা
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের এই নির্মম ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, থাকসিন বলেন:
আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবসময় স্থানীয় জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। যদি আমার কোনো সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপে কারও মনে আঘাত লেগে থাকে বা কষ্টের সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়াথাইল্যান্ডের মানবাধিকার সংস্থা দুয়ে জাই-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঞ্চনা হেইমিনা এই ক্ষমা চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে তিনি বলেন,
"যদি থাকসিন সত্যিই আন্তরিক হন, তবে তাকে ভুক্তভোগীদের পরিবারের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।"
দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটথাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল, যা 'ডিপ সাউথ' নামে পরিচিত, মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। এই অঞ্চলটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ থাইল্যান্ড থেকে ভিন্ন। এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে।
গণহত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনা সেখানে সরকারের দায়মুক্তি এবং বিদ্রোহ দমনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ঘটনার পর দুই দশক পেরিয়ে গেলেও, অঞ্চলটির মানুষ এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছে।
থাকসিনের এই প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া কি ক্ষত সারাতে কোনো ভূমিকা রাখবে, নাকি শুধু একটি রাজনৈতিক কৌশল—এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। তবে নিঃসন্দেহে এই ক্ষমা তার নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিফলন।
Comments
Post a Comment